ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর: জেলা পরিচিতি (বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব, দর্শনীয় স্থান ইত্যাদি)

বিসিএস, ব্যাংক সহ সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন চাকরির পরিক্ষায় ভাইবাতে জেলা ভিত্তিক প্রশ্ন হয়। আজকের এই আর্টেকেলটির মাধ্যমে চাঁদপুর জেলার বিস্তারিত সম্পর্কে জানব।



ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর জেলা পরিচিতি (বিভিন্ন ব্যক্তিত্ব, দর্শনীয় স্থান ইত্যাদি)।




চাঁদপুর জেলা আয়তনে বাংলাদেশে ৪১ তম জেলা। এটি চট্রগ্রাম বিভাগের মধ্যে ৯ম। দেশের জনসংখ্যা হিসেবে ২২তম জেলা। চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে ৬ষ্ঠ।

ইলিশের বাড়ি: চাঁদপুর

চাঁদপুর জেলার সঙ্গে অবধারিতভাবে ইলিশের নাম চলে আসে। তাই ২০১৭ সালে এই ইলিশকে ঘিরেই হয় জেলার ব্রান্ডিং। পদ্ম-মেঘনা অববাহিকায় ইলিশ যে ধরণের খাবার খায় এবং পানি প্রবাহের যে মাত্রা তার ফলে এই শরীরে উৎপন্ন হওয়া চর্বিই এর স্বাদ অন্য যেকোন জায়গার ইলিশের চেয়ে ভিন্ন করেছে। ইলিশের তিনটি প্রজাতি রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে রুপালি ইলিশ, যেটি আকারে বড় এবং স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়। অন্য দুটি জাতের মধ্যে একটি চন্দনা ইলিশ, অন্যটি গুর্তা ইলিশ। এগুলো আকারে ছোট এবং স্বাদও কম। এদের অবস্থান সাগরেই বেশি। পৃথিবীর মোট ইলিশের প্রায় ৬০% উৎপন্ন হয় বাংলাদেশে।

চাঁদপুর জেলার নামকরণের পটভূমি

বর্তমান চাঁদপুর প্রাচীন বঙ্গে সমতট রাজ্যের অন্তভুক্ত ছিল। ব্রিটিশ আমলে  প্রশাসনিক পূর্ণবিন্যাসের ফলে ১৮৭৮ সালে প্রথম চাঁদপুর মহকুমার সৃষ্টি হয়। ১ অক্টোবর ১৮৯৬ সালে চাঁদপুর শহরকে পৌরসভা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৬০ সাল পর্যন্ত এটি ত্রিপুরা জেলার অংশ ছিল। ১ অক্টোবর ১৯৬০ ত্রিপুরা জেলার নামকরন করা হয় কুমিল্লা। স্বাধীনতার পর ১৫ ফেব্রুয়ারী ১৯৮৪ সালে চাঁদপুর কুমিল্লা জেলা থেকে আলাদা হয়ে পৃথক জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

চাঁদপুর জেলার নামকরণ


চাঁদপুর জেলার নামকরণ নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। বার ভূঁইয়াদের আমলে চাঁদপুর বিক্রমপুরের জমিদার চাঁদরায়ের দখলে ছিল। এ অঞ্চলে তিনি একটি শাসনকেন্দ্র স্থাপন করেন। ধারণা করা হয় তার নাম অনুসারে এ অঞ্চলের নাম হয়েছে চাঁদপুর। কারো কারো মতে, শাহ আহমেদ চাঁদ নামে একজন প্রশাসক দিল্লী থেকে পঞ্চদশ শতকে এখানে এসে একটি একটি নদী বন্দর স্থাপন করেন। তার নামানুসারে এ অঞ্চলের নাম হয় চাঁদপুর।

মুক্তিযুদ্ধে চাঁদপুর জেলা


সেক্টর: ২ নং
৪ ডিসেম্বর: মতলব উত্তর ও দক্ষিণ।
৬ ডিসেম্বর : হাইমচর, কচুয়া
৮ ডিসেম্বর: চাঁদপুর সদর, হাজাীগঞ্জ, শহরাস্তি
২৪ ডিসেম্বর: ফরিদগঞ্জ।
বীর মুক্তযোদ্ধা: রফিকুল ইসলাম (১নং সেক্টর কমান্ডার), আবু ওসমান চৌধুরী ( ৮নং সেক্টর কমান্ডার), এম এ ওয়াদুদ (ভাষা সৈনিক)।


চাঁদপুর জেলা সম্পর্কে সাধারণ তথ্যাবলি

প্রতিষ্ঠা: ১৫ ফেব্রয়ারী ১৯৮৪।
সীমানা: উত্তরে মুন্সীগঞ্জ ও কুমিল্লা; দক্ষিনে নেয়াখালি, লক্ষ্মীপুর ও বরিশাল; পূর্বে কুমিল্লা এবং পশ্চিমে মেঘনা নদী, শরীয়তপুর ও মুন্সীগঞ্জ জেলা।
আয়তন: ১,৬৪৫.৩২ বর্গ কিলোমিটার। (সূত্র: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বুরো।
জনসংখ্যা: ২৬,৩৫,৭৪৮ জন।
ঘনত্ব: ১,৬০২ জন।
সাক্ষরতা: ৭৮.২৩% (৭ বছর ও তদূর্দ্ধ)।

চাঁদপুর জেলার প্রশাসনিক কাঠামো

উপজেলা: ৮টি (চাঁদপুর সদর, হাজীগঞ্জ, শহরাস্তি, হাইমচর, ফরিদগঞ্জ, কচুয়া, মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ।
থানা: ৮টি।
পৌরসভা: ৭ টি ( চাদপুর, হাজীগঞ্জ, শহরাস্তি, ফরিদগঞ্জ, কচুয়া, ছেঙ্গারচর ও মতলব।
ইউনিয়ন: ৮৯ টি।
জাতীয় সংসদে আসন: ৫ টি।

চাঁদপুর জেলার প্রধান নদনদী

মেঘনা, ডাকাতিয়া, পদ্মা, ধানগোদা।

চাঁদপুরের উল্লেখযোগ্য স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান


চাঁদপুর সদর: মোলহেড ত্রিনদীর সঙ্গমস্থল, বঙ্গবন্ধু পর্যটন কেন্দ্র, রক্তধারা স্মৃতিসৌধ, মৎস্য জাদুঘর।
হাজীগঞ্জ: মাদ্দাখাঁ (র:) এর মাজার ও জামে মসজিদ, বড়কুল জমিদার বাড়ি।
শহরাস্তি: হযরত শাহরাস্তি (র:) এর মাজার শরীফ। হাইমচর: তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ ও প্রাচীন কবর।
ফরিদগঞ্জ: রুপসা জমিদার বাড়ি, সাহেবগঞ্জ নীলকুটি।
কচুয়া: সাহার পাড়ের দিঘি, তুলাতুলি মঠ।
মতলব উত্তর: ষাটনল পর্যটন কেন্দ্র, ধনগোদা নদী, গজরা জমিদার বাড়ি, মিঠা পানির মিনি সৈকত মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্র।
মতলব দক্ষিণ: বোয়ালিয়া জমিদার বাড়ি, কাঞ্চন দিঘি।

চাঁদপুরের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব

সাবেক প্রধান: আজিজ আহমেদ (বাংলাদেশ সেনাবাহিনী), এয়ার ভাইস মার্শাল রফিকুল ইসলাম (বিমানবাহিনীর প্রধান), মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী (আইজিপি, বাংলাদেশ পুলিশ), ইকবাল মাহমুদ (চেয়ারম্যান, দুদক)।
রাজনীতিবীদ: মিজানুর রহমান চৌধুরী (প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী), মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীর বিক্রম), আব্দুল মতিন (আইন পরিষদের স্পিকার), ডা: দীপু মনি (বাংলাদেশের প্রথম নারী শিক্ষামন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী)।
সঙ্গীত শিল্পী: এসডি রুবেল।
চিত্রশিল্পী: হাশেম খান ও মনিরুল ইসলাম।
অন্যান্য: কবির বকুল (গীতিকার), নূরজাহান বেগম (মাসিক বেগম পক্রিকার সম্পাদক), অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম (দেশের প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক নজরুল গবেষক)

সঞ্চয়িতা: ইকরা
সহযোগীতায়: মিম ইসলাম।
তথ্যসূত্র: প্রফেসর’স কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, এপ্রিল সংখ্যা।

Ref: Professor's Current Affairs

আমাদের দেওয়া তথ্য সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামত জানাতে কমেন্ট করতে পারেন। এই জেলা সম্পর্কে তথ্য এড করতে চাইলে আমাদের মেইল করতে পারেন। অথবা কমেন্টও করতে পারেন। আমাদের দেওয়া তথ্য যদি ভুল হয় অবশ্যই আমাদের জানাবেন। আমরা সথাসম্ভব সংশোধন করে দিব। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।





Post a Comment (0)
Previous Post Next Post